এনটিআরসিএ’র স্বৈরাচারীতার বিরুদ্ধে সকল নিবন্ধিতের ঐক্যের বিকল্প নেই।

 

ভূপেন্দ্র নাথ রায়, দিনাজপুর প্রতিনিধি  । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

জাতির শিক্ষিত সন্তানেরা আজ ক্রান্তিলগ্নে। এ ঘোর অমানিশায় বাংলাদেশের সকল শিক্ষক নিবন্ধিতের ঐক্যের বিকল্প নাই। একটি জাতি যখন উন্নতির পথে ধাবিত হয়, তখন তার বৃহত্তর শিক্ষিত যুবকদের বেকারত্ব নামক অন্ধকারে রেখে কখনই জাতির পরিপূর্ন উন্নয়ন সম্ভব হতে পারে না। সরকারের ছত্র ছায়ায় একটি প্রতিষ্ঠান দিনের পর দিন দূর্নীতি করেই যাচ্ছে। আর সরকারের উচ্চ মহল সেখানে দেখেও না দেখার ভান করছে। এটি গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় কতটুকু যুক্তি যুক্ত তা গভীর চিন্তার বিষয়। এ নিয়ে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার আজ জাতির বিবেকের কাছে জানতে চায়।
জাতির অর্ধেক জনসংখ্যাকে অন্ধকারে রেখে যেমন একটি জাতি উন্নতি করতে পারেনা, ঠিক তেমনি লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত যুবদের বেকার রেখে কিভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিনত হয়? শুধু চারদিক ডিজিটাল ডিজিটাল বলে সূর তুললেই দেশ ডিজিটাল হয়না। এ দেশের লক্ষ লক্ষ যুবক যখন বেকারত্ব নামক অভিশাপে জর্জরিত হবে, তখনই দেশে খুন, রাহাজানি, সন্ত্রাস মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে এর কোন সন্দেহ নাই। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- “An idle brain is the devil’s workshop.” বেকার যুবকদের যখন করার কিছু থাকবেনা তখন জীবন জীবিকার টানে স্বভাবতই ন্যায় অন্যায়ের জ্ঞান থাকবে না। প্রত্যেকে সামাজিক নিয়মানুসারে বিয়ে করতে হবে। বউ, বাচ্চা, বৃদ্ধ পিতামাতার দায়িত্ব নিতে হবে। এসব করতে বাড়ির বাইরে কোম্পানি, এনজিও কিংবা গার্মেন্টে চাকরি সবার পক্ষে সম্ভব হয়না। প্রত্যেক শিক্ষিত যুবক কারো না করো সন্তান। মানবিক কারনে বিষয়টি নাড়া দিচ্ছে নিবন্ধিতদের পরিজনের কাছে। এ বিষয়ে দেশের বুূ্দ্ধিজীবিদের নিরবতা সত্যিই প্রশ্ন বিদ্ধ। দুখিত তাদেরকে হার্ট করে কথা গুলো বলা হচ্ছে না। কিন্তু শিক্ষিত যুবকেরা অন্তত প্রত্যাশা করেন যে পিতৃতুল্য অবিভাবক মন্ডলী কমপক্ষে বিষয়টি নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তুলবেন।
ন্যায় সংগত দাবীতে শিক্ষিত যুব সমাজ বঞ্চিত বলেই শেষ আশ্রয়স্থল মহামান্য আদালতের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়েছে। পৃথিবীর এ্যামন কোন্ দেশে আছে যেখানে পড়াশুনা করে একটি সার্টিফিকেট নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে আবদ্ধ থাকে? কোন সার্টিফিকেটের মেয়াদ বারবার পরিবর্তন করে? বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের গড়া সোনার বাংলাদেশ কিভাবে এত শিক্ষিতদের অন্ধকারে রেখে বাস্তবায়িত হবে তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে লক্ষ নিবন্ধিতের আর্জি।
আজ যে সকল নিবন্ধিত নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে রাস্তায় নেমেছে তারা শিক্ষক হওয়ার সবাই যোগ্য। সরকারি প্রজ্ঞাপন মোতাবেক পরীক্ষা দিয়েই আইনসম্মতভাবে প্রতিটি জেলার শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে সনদ সংগ্রহ করছেন। তাহলে কেন তাদের সাথে ছল-চাতুরি? গত ৩০ জুলাই এনটিআরসিএ মহামান্য হাইকোর্টে ৮-১২ তম প্রার্থীদের মেরিট লিস্ট দেওয়া হয়েছে। সেখানে এনটিআরসিএ দপ্তরে ১-৭ম দের কোন তথ্য ডাটাবেজে না থাকার কারনে তাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অনেক নিবন্ধিতই প্রশ্ন তুলেছেন এনটিআরসি আমাদের ডকুমেন্ট লোপাট করলেও তার দেয়া বৈধ সনদ তো আমাদের কাছে আছে। জেলা শিক্ষ অফিসেও তথ্য আছ। অনেক নিবন্ধিত সহ সচেতন মহল দাবী করেন এনটিআরসিএ’র কুকর্ম ঢাকতে এ তথ্যগুলো লোপাট করা হতে পারে। এ ব্যাপারে বরিশাল সদরের তারেকুল ইসলামের ভাষ্যমতে বলা যায় সরকারি দপ্তর থেকে অনেক গুলো তথ্য হঠাৎ উধাও অথচ দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, কর্মচারীরা বহাল তবিয়তে চাকরি করছে। জনৈক সহপরিচালক বলেন, এ্যাটেন্ডেন্ট- কর্মচারীদের অবহেলায় কীভাবে হলো তা ঠাহর করা যাচ্ছেনা। মানুষ মাত্রই ভুল হয়। এটুকু দায়িত্ব জ্ঞানহীন জবাব দিয়েই ক্ষান্ত হন। পাঁচ-তিন বছর মেয়াদ হলেও সনদ হারানোর অভিযোগ থেকে একটি প্রতিষ্ঠানের দায়ী কর্মকর্তা, কর্মচারী এড়িয়ে যেতে পারেনা।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, নিবন্ধিতদের মধ্যে অধিকতর যোগ্য প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়ার জন্যই আবারও পরীক্ষা গ্রহন করা। এনটিআরসিএ কখনও অনুধাবন করেছে সকল যুগে কিছু না কিছু মেধাবী থাকে যাদের আলোয় বিশ্ব আলোকিত হয়। ১-১২ তম নিবন্ধন পরীক্ষায় অনেক মেধাবী আছে যাদের এখনও পর্যন্ত চাকরি হয়নি। তাহলে এনটিআরসিএ কিভাবে মেধাবীদের নির্বাচিত করলো? এছাড়া বিভিন্ন স্থানে মেধাবী প্রার্থী থাকলেও অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীদের কিংবা উপজেলায় সংশ্লিষ্ট প্রার্থী থাকার পরও অন্য উপজেলা থেকে নির্বাচন করার অভিযোগ উঠেছে। সর্বোপরি, বেসরকারি স্কুল কলেজে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তদের কমপক্ষে নিয়োগ দিতে পারলেও হয়তো কিছুটা অযোগ্য  প্রতিষ্ঠানের তকমাটা লোপাট করতে পারতো। কিন্ত চোর চুরি করলে অজান্তেই যে কিছু প্রমাণ রেখে চলে যায়, এটা তারই নমুনা।
শিক্ষিত জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে যখন দেশের সর্বোচ্চ মহল পর্যন্ত নির্বাক, তখন শিক্ষক মনোভাবের নিবন্ধিতদেরই এর বিরুদ্ধে লড়তে হবে। শিক্ষিত বলেই অন্যান্য আন্দোলনে দাবী- দাওয়ার মতো এরা কোন প্রকার ভাঙ্গচুর, কোন জানমালের ক্ষতি করেনি।  রাস্তায় ব্যারিকেড পর্যন্ত দেয়নি। কারও শান্তি ভঙ্গ করেনি। এরা শিক্ষকসূলভ আচরণ মনের মধ্যে লালন করে। তাহলে ভাবুন এর হিংস্র না বিবেকবান। এই নিবন্ধিত জাতির ধৈর্য ও আস্থা আছে বলেই সর্বোচ্চ আদালতের ন্যায় বিচারের অপক্ষায় প্রহার গুনছে। অথচ, নিবন্ধিতরা মনে করেন এনটিআরসিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে এ হেন আচরন করলে তারা জ্বালাও পোড়াও শুরু করত এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই।
অন্যদিকে এনটিআরসিএ যে শূন্য পদের তালিকা দিয়েছেন তা কি আদৌ সঠিক? সবাই মনে করে আরো বেশী শূন্যপদ আছে। কিন্তু  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা এ ব্যাপারে এনটিআরসিএ’র নির্দেশনাকে অমান্য করেছেন। শিক্ষামন্ত্রনালয়ের একটি প্রতিষ্ঠানের আদেশ-নির্দেশ যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান/মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা না মানেন তাহলে আদতেই নির্বাহী আদেশ অমান্য করার পর্যায়ে পড়ে যা যাচাই করলে সত্যতা পাওয়া যাবে।
এনটিআরসিএ’র দূর্নীতির বিরুদ্ধে সুষ্ঠ বিচারের জন্য সকল নিবন্ধিতের ঐক্য গড়ার বিকল্প নাই। আজকে এই প্রতিষ্ঠানটি ১-১২ দের সাথে খেলছে, আগামীকাল হয়তো ১৩, ১৪দের সাথে খেলবে না এর কি নিশ্চয়তা?

  • কাগজ টুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!