জার্নি টু ব্যারোনেস যেইন চ্যাম্পেল ইন হাউস অফ লর্ডস।

জার্নি টু ব্যারোনেস যেইন চ্যাম্পেল ইন হাউস অফ লর্ডস।
-ফরিদা ইয়াসমিন জেসি

হঠাৎ করে আমার মেছেঞ্জারে একটা মেছেজ এলো গ্রেস আলেকজান্ডার এর কাছ থেকে। “ইয়ো আর ইনভাইটেড টু গো হাউস অফ লর্ডস ফ্রম গ্রেস টু মিট ব্যারোনেস জেইন চ্যাম্পেল।”

গ্রেস এরআগে আমাকে আরেকবার ইনভাইট করেছিলো ‘অল উমেন্স মেটার’ এর একটা কনফারেন্সে হাউস অফ লর্ডস এ।
গ্রেস হচ্ছে স্টার ইনিশেটিভ চিলড্রেন এর সিও। উনি আফ্রিকার ডিসেবল চিল্ড্রেনদের জন্য কাজ করছেন। লন্ডন থাকেন।
ফেইস বুকে আমার কিছু পোষ্ট দেখে উনি প্রায়ই আমাকে কমেন্ট করেন,আমি বড় বেশি প্রচারে যাইতে পারিনা আমার কাজকে সহায়তার জন্য, রেডিও, টেলিভিশন, নিউজ পেপার এ বিজ্ঞাপন আমার সাধ্যের বাইরে আমার কাছে ম্যান পাউয়ার নাই। আমার কাছে তেমন টাকা পয়সাও নাই।

ফেইস বুকই আমার সম্ভল। যা কাজ যেভাবে করছি বাংলাদেশের অল্প কয়েকজন দরদি মানুষ আর লন্ডনের কয়েকজন দরদি বন্ধু দের নিয়ে, সেটার আগা গোড়া বিষয় ফেইস বুকেই লিখে রাখি, অনেকটা এরকম যেনো হাজারো দর্শকের সামনে আমি একক অভিনয় করছি, সবার দৃষ্টি পড়বে বলে আমার উপর এবং আমাকে সহায়তার হাত বাড়াবে কেউ কেউ দর্শকের মাঝ থেকে। এরকমটাই অবশ্য হচ্ছে। ফেইসবুকে এক্টিভিটির ছবি দেখে তাঞ্জিলা জামান এসে আমার ইন্টারভিও নিয়ে গেলো।
ফেইস বুকে আমার লেখা পড়ে মনিরুল ভাই মিটিং ফিক্স করলেন ক্যানারি অয়ার্ফ গ্রোপের ডাইরেক্টর জাকির হোসেন সাহেবের সাথে। এবং মিটিং ও হলো কিভাবে আর্ন এবং লার্ন এন্ড লিভকে সহায়তা করবেন।

এবার পেলাম ইনভাইটেশন হাউস অফ লর্ডস এর ব্যারনেস যেইন চ্যাম্পল এর সাথে দেখা করতে। ঘটনাটা সেদিন ছিলো এরকম। হাতে সময় ছিলো সেদিন খুবই কম। দ্রুত পৌছাতে হবে হাউস অফ লর্ডসে, গেটের কাছে অপেক্ষা করবে গ্রেস বেলা ২ঃ৪৫, তারপর আমরা ভেতরে যাবো একসাথে। মিটিং হবে ৩ টায়। মিটিং হবে তিনজনের আমি, গ্রেস এবং ব্যারোনেস।
আমি যখন স্টেপ্নি গ্রিন ট্রেন স্টেশনে যাই তখন বেলা বাজে ২ টা, অপেক্ষা করছি ডিস্ট্রিক লাইন ট্রেন এর জন্য, উয়েষ্ট মিনিষ্টার নামবো। পা আমার কাপা কাপি করছে ট্রেন আসছে দেড়িতে তাই, ট্রেন আসতেই দৌরে উঠে সিটে বসলাম, ইস, ট্রেন এর পা যেনো চলছিলোনা একেবারেই। ঘরির কাটা টিং টং ঘড়িতে না বেজে বাজছিলো যেনো আমার বুকে কারন ২টা ৪৫ মিনিট ইতিমধ্যে বেজে উঠেছে জখন আমি উয়েষ্টমিনিষ্টারে নামি। দ্রুত দৌড়িয়ে গেটে যেতেই সিকিউরিটি চেক আপের জন্য দাড় করানো হলো আমাকে , আমার নামে গেটে পাস থাকার কথা, জিজ্ঞেস করলাম, নাহ এই গেটে নেই। অফিসার হাত উচিয়ে দেখালো ঐ যে ঐ গেটে। হিল পড়া জুতায় কট কট শব্দ তুলে দৌড়াতে থাকলাম। অবশেষে সেই গেটে গিয়ে পোছালাম ঠিকই কিন্তু বেলা তখন ৩ টা, গ্রেইস গেটের পাশে নয় একেবারে মিটিং এ বসে গেছে ব্যারোনেস এর সাথে এ আমি বুঝলাম কারন ফোন দিলাম ফোন তার বন্ধ।

অফিসারের কাছে বললাম আমার নামে পাস আছে,

-নেইম?

-ফরিদা ইয়াসমিন জেসি

-আই এম আফ্রেড উয়োর নেইম নট ইন হিয়ার।

– ইয়েস সুড বি দেয়ার।

অফিসার ফোন করলেন ভেতরে কনফার্ম করলেন হা আমার নাম বানানে ভুল ছিলো তাই কম্পিউটার এ আসেনি।

-ইউও মে গো নাউ।

ভেতরে প্রবেশ এর পর সিকিউরিটি চেক হলো নানা ভাবে এবং বসতে বলা হলো । আমাকে এসে নিয়ে যাবেন উপরে কেউ একজন।

কিছুক্ষন অপেক্ষার পর সোঠাম দেহের একজন গৌর বর্নের ভদ্রলোক এসে ডাকলেন আমার নাম। আমি উঠে দাড়ালাম এবং পিছে পিছে যেতে শুরু করলাম উপরে, এক তলা থেকে আরেকতলা, এক করিডোর থেকে আরেক করিডোর। আমি দু চোখ জুড়িয়ে অবাক বিস্বয়ে তাকিয়ে দেখছি আমার চারিপাশ আর হাউস অফ লর্ডসের ভেততের উচু দামের মানুষগুলোকে। বেশির ভাগ মানুষই বয়োজ্যেষ্ঠ পুরোনো মানুষ, খাটি বৃটিশ।

আমার ধ্যান চলে গেলো আমার অশহায় প্রতিবন্ধী সন্তানদের জন্য, দেশে তোমরা আছো, কে কোথায় কেমন আছো, আর আমি তোমাদের কথা, তোমাদের ভাল থাকার কথা ভেবে, এই দেখো আমি কোথায় এসেছি।

হাটতে হাটতে পথ ফুড়াচ্ছে না, ভেতরের জায়গাটা বিশাল পরিসরে । হাটতে হাটতে আমি ডুবে গেলাম সপ্ন দেখার ভেতরে। ভাবলাম কবে কখন আমি কি করতে পারবো, কবে আমি আমার সন্তান্দের জন্য সোনার হরিণ ধরতে পারবো জানিনা, তবে পথ হাটবো এভাবে দিনের পর দিন।

হঠাৎ ব্যারোনেস এর রুমের দরজায় কড়া নাড়তে ভেতর থেকে বললেন – কামিং।

আমি ভেতরে ঢুক্লাম, গ্রেস এবং ব্যারোনেস উয়েল কামের হাসি দিয়ে বললো হ্যালো ফরিদা, কামিং কামিং। আমি হেসে দিয়ে বসতে বসতে কিল কিল করে বলে নিলাম দেরি হবার বিরল ঘটনা।

আহা আমি ব্যারোনেসকে দেখে অভিবুত হলাম।

তুমি ব্যারোনেস? তুমি এত সন্মানিয়া? তুমি এত কঠিন পরিশ্রমি, তুমি এতই কঠিন যোদ্ধা?

সেলুট তোমাকে,তোমার জীবনীশক্তিকে। এত উচুতে তুমি পেয়েছো স্থান, তুমি পার্লামেন্টে বসো আরো দশ জনের সাথে একি কাতারে?

আহারে আমার দেশ, আহারে আমার বিশেষ শিশুরা। আমার দেশের প্রতিবন্ধী মানুষেরা কবে পাবে এরকম স্থান পার্লামেন্টে।
লম্বা টেবিলের পুরোটাই খালি একপাশের এক কর্নারে গ্রেস আরেক পাশে ব্যারোনেশ। আমি তাদের মাঝখানে গিয়ে বসলাম, আরেক পাশে বেরোনেশ এর কেয়ারার দেখে রাখছে গ্রেস এর ছেলেকে।

ব্যারোনেস জানে আমি বাংলাদেশ এর জন্য এবং গ্রেস আফ্রিকার প্রতিভন্ধিদের বাচ্চাদের জন্য কাজ করছে। আমি কথা বলছিলাম আর তার দিকে চেয়ে চেয়ে অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করছিলাম তার কস্ট। কেয়ারার একটু পর পর মুখের ভেতর অক্সিজেন দিচ্ছিলো, হাত, হাতের আংগুল টেনে সোজা করে দিচ্ছিলো। অসম্ভব জীবনীশক্তি নিয়ে আমাদেরকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। কি রাইট আছে প্রতিবন্ধিদের , কোথায় কোথায় আমরা যাবো সঠিক ইনফরমেশন এর জন্য, কোথায় তার রেফারেন্স দিবো ইত্যাদি ইত্যাদি। হঠাৎ করে আমি কাশতে শুরু করলে বললেন ডু ইয়ো হ্যাভ কোল্ড? আমার কোল্ড হলে খুব খারাপ ইনফেকশন হয়ে যায়, এবার আমি একটু সরে বসলাম। ভাবলাম এত কষ্টের ভেতর আরো যদি কষ্ট বাড়ে ইনফেকশন হয়ে। তাই আমি সতর্ক হলাম।

উনার কথাগুলো আমরা দুজনেই লিখে রাখলাম।

ছবি তুলতে চাইলাম, বললেন, না। ভেতরে এলাও না। তবে গ্রেস এর ছেলের সাথে একটি ছবি তুললেন উনি একই সাথে আমরা উপর তলা থেকে নেমে আসলাম,উনার মিটিং ছিলো নিচের তলায়, উনার হুইল চেয়ারটা টেনে নিয়ে এলেন উনার কেয়ারার।
আমি সাথে সাথে হাটছি আর ভাবছি।

বৃটিশদের ভেতর কতটাই মানবিকতা এই প্রতিবন্ধীদের জন্য, বৃটিশ বাবা মায়েরা পরিবারের সকলেরা কতইনা সচেতন এদের বেড়ে উঠা, এদের সঠিক শিক্ষায় গড়ে তুলার জন্য।

আর আমার দেশের পরিবারের মানুষগুলো কতইনা নিষ্ঠুর, লোকিয়ে রাখে সন্তান্দের তাদের নাকি মান সন্মান চলে যাবে সমাজের কাছে তাই।

আমি কাজ করছি না শুধু রীতিমত যুদ্ধ করছি কয়েকজনের জন্য, মেয়েদের ঘরে বন্ধি রাখতে তারা পছন্দ করে, শিক্ষার জন্য বাইরে আসাতে নিষেধ করে, তাদের কথা অমান্য করলে বাড়ি শুদ্ধ মানুষ তাদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে। দিনের পর দিন না খেয়ে থাকে মেয়েরা অভিমান করে।

আজ জেইন চ্যাম্পেলএর মা বাবা ভাই রা যদি উনাকে পড়ালেখার জন্য কাজ করার জন্য নিষেধ দিতেন। তাহলে কি উনি এত বড় দায়িত্বে কাজ করতে পারতেন? পারতেন না। ইয়া আল্লাহ আমার দেশের প্রতিবন্ধী শিশুদের পরিবারদের সুমতি দাও।
ওরা যেনো আর অন্ধকারের ভেতর না থাকে।

বিঃ দ্রঃ এ আমার নিজের কোনো প্রচারণা নয়, এ আমার কাজের সত্যতা এবং আমাকে সহায়তার জন্য সবার দৃষ্টি আকর্শন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!