দেওধান বা মিগারু

দেওধান বা মিগারু
—- সেলিনা জাহান প্রিয়া

নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের পাতলাবন গ্রামের কৃষক আন্দ্রিয় রেমা (৫৩) প্রথমবারের মত অত্র অঞ্চলে দেওধান চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিগত বছর কৃষক আদ্রিয় রেমা সপরিবারে ভারতে তাদের এক আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াতে গিয়ে দেওধান দেখতে পান। সেখান থেকে তিনি খই হিসেবে খাওয়ার জন্য কিছু দেওধান নিয়ে আসেন। তা থেকে বেশীর ভাগই খই ভেজে খেয়ে ফেলেছেন। আর কিছু বীজ তিনি রোপন করেছেন এবং আরো কিছু বীজ অপর দুজন কৃষককে দিয়েছেন বারসিক এর মাধ্যমে।

কৃষক আদ্রিয় রেমা বলেন, “ভারতে এটি জুমে চাষ করে। আমাদের এলাকায় কেউ চাষ করেনা। আমাদের এলাকার বেশীর ভাগ জমি বালি। তাই সারাবছরই পতিত থাকে। আমার বালি জমিতে পরীক্ষা মূলকভাবে এই বছরই প্রথম চাষ করে দেখলাম। এটি খুব বেশী যত্ন করতে হয়না। শুধুমাত্র আগাছা বাছাই করে দিলেই হয়। পানিও দিতে হয়না।
চাষাবাদ পদ্ধতি
দেওধানের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানান মার্চ-এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তহের মধ্যে বীজ বপন করতে হয়। বপন পদ্ধতি হচ্ছে ১ ইঞ্চি পরিমাণ মাটি গর্ত করে প্রতিটি গর্তে ২-৩টি বীজ পুতে দিতে হয়। ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে চারা গজায়। গাছ দ্রুত বাড়ে। গাছটি বড় হলে বেশ জায়গা দখল করে তাই ২-৩ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে বীজ পুতে দিতে হয়। ছোট বেলায় গাছটি দেখতে ভুট্টা গাছের মত হলেও পরিপূর্ণ এক একটি গাছ ঠিক আখ গাছের মত। এর উচ্চতা প্রায় ৯-১০ ফিট। এর পাতা, গাছের ধরণ, আকার, আকৃতি হুবহু আখ গাছের মত। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে সাদা রঙের ফুল ফোটে। ফুল ফোটার ১০-১২ দিনের মধ্যেই দানাদার বীজ হতে শুরু করে। এর পর ১-২ মাসের মধ্যে বীজ পরিপক্ক হতে শুরু করে। ফুল হতে যখন ফল বা বীজ হতে শুরু করে তখন এর খোসার রং সবুজ ও খয়েরী রঙের হয়ে থাকে। তার পর এর রং সাদা হয়ে যায়। পরিপক্ক দেওধানের রং ধবধবে সাদা হয়। ফুল হতে ফল বা বীজগুলো শক্ত হতে শুরু করলেই খোসাগুলো বীজের চারপাশ ছড়িয়ে পড়ে। ধানের মতই অনেকগুলো শীষের সমন্বয়ে গোছা আকারে ফলন হয়। এক গোছা হতে ফলন হয় প্রায় ২০০-৩০০ গ্রামের মত।

প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও পোকাঁর আক্রমন
কার্তিক মাসের শেষের দিকে হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি শুরু হওয়ায় দেওধান গাছের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। কারণ এই সময় গাছে ফুল আসা শুরু হয়। ঝড় বৃষ্টিতে অধিকাংশ ফুল ঝরে গিয়েছিল। গাছটি অনেক লম্বা হওয়ায় অনেকগুলো গাছ ভেঙ্গে পড়ে গিয়েছিল। তারপরও কিছু কিছু গাছ টিকে গিয়েছিল। সেখান থেকেই কৃষক এবার বীজ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে। কৃষক আদ্রিয় রেমা জানান দেওধানে সাদা জাব পোকা ও গান্ধি পোকার আক্রমন বেশী দেখা দেয়। তবে পোকাঁ দমনের জন্য তিনি শুধুমাত্র ছাই ব্যবহার করেছেন বলে জানান। তিনি আরো জানান পোঁকা আক্রমন করলে পোঁকা দমন করা যায়। কিন্তু পাখির উপদ্রব থেকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে যায়। কারণ দেওধান পরিক্ক হওয়ার পূর্বেই বাবুই পাখির উপদ্রব দেখা দিয়েছিল।ব্যবহার
দেওধান দিয়ে খই হয়। সাধারনত বালি ও ধান দিয়ে যেভাবে খই ভাজা হয় সেইভাবেই সামান্য বালি পাত্রে রাখতে হয়। বালি গরম হলে তাতে দেওধান ছেড়ে দিলেই খই হয়ে যায়। কৃষক আদ্রিয় রেমা ভারতে গিয়ে দেখেছেন তারা এটি ময়দার মত গুড়া করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে এবং রুটি ও নানান স্বাদের পিঠা তৈরি করে খায়।

নতুন ধরনের ফসল নতুনভাবে এলাকায় উৎপাদন হওয়ায় যারা এটি কখনই দেখেননি তারা দেখতে গিয়েছেন এবং জানার চেষ্টা করেছেন। তিনি ছাড়াও বারসিক এর মাধ্যমে আরো ২জন কৃষক (পাতলাবন গ্রামের সবিতা মানখিন ও চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামের বেনুকা ম্রং) দেওধান চাষ করেছিলেন। তার মধ্যে সবতিা মানখিনের জমিটি পাথুরে ঝুরঝুরে বালি হওয়ায় সেখানে কোন বীজ অংকুরোদগম হয়নি। তবে চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামের কৃষক বেনুকা ম্রং এর জমিতে গাছ হয়েছিল, ফলনও হয়েছিল। কিন্তু বাবুই পাখির উপদ্রবের কারনে খুব কম পরিমাণ বীজ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন। এই বছর তারা আরো বেশী পরিমানে চাষ করবেন এবং অন্যান্য কৃষকের মাঝেও তারা এটি সম্প্রসারন করবেন বলে জানান। তথ্য সূত্র- ইন্টার নেট ।

28661084_405004669964544_144937249694177232_n

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!