ব্যারিস্টার মওদুদ ৮৫তে জাপায় যোগ দিলে ৮২তে আলতাফ মাহামুদের পরিবার উচ্ছেদে দায়ী হন কিভাবে?

 

 

 

অনলাইন ডেস্ক  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

মউদুদ সাহেব এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৮৫ সালে। তাহলে উনি ১৯৮২ সালে আলতাফ মাহামুদের পরিবারকে উচ্ছেদ করার জন্য দায়ী হলেন কিভাবে?

শহীদ আলতাফ মাহামুদের মেয়ে দেখলাম বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মউদুদ আহমেদকে বাড়ী থেকে উচ্ছেদের ঘটনায় আনন্দিত হয়ে একটা লেখা প্রসব করেছেন এবং দেশের তাবত চেতনাপন্থী ফেসবুকাররা খোঁজ খবর না নিয়েই সেই পোস্ট পাইকারীহারে শেয়ার করছে!

ব্যারিষ্টার মউদুদ আহমেদ আওয়ামী লীগ দিয়েই তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। ১৯৬৮ সালে তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবের আইনজীবী প্যানেলের সদস্য ছিলেন, ১৯৬৯ সালে তিনি আইয়ুব খানের সাথে গোল টেবিল বৈঠকে শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোগি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন এবং ১৯৭১ সালে উনি লন্ডনের বিলাসী জীবন ছেড়ে কোলকাতায় এসে প্রথমে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ইংরেজী সংবাদ পাঠক হয়েছিলেন, পরবর্তীতে তিনি মুজিবনগর সরকারের বর্হিবিশ্ব প্রচারণা বিভাগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো আন্তজার্তিক অঙ্গনে প্রচারের অনেকটা কৃতিত্বই তৎকালীন তরুণ ব্যারিষ্টার মউদুদ আহমেদের।

মুক্তিযুদ্ধ শেষে মউদুদ আহমেদ আওয়ামী লীগ আমলে সরকারী নির্যাতের শিকার বাম রাজনীতিকদের বিনা খরচায় আইনী সহায়তা দিয়েছেন। তারপর ১৯৭৭ সালে প্রথমে বিএনপি, ১৯৮৫ সালে জাতীয় পার্টি হয়ে শেষে ১৯৯৬ সালে আবারো বিএনপিতে ফিরেছেন।

তিনবার দল বদল করার কারণে অবশ্যই উনার সমালোচনা করা যায়, আইনমন্ত্রী থাকাকালে উনার কিছু সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা যায়, এরশাদের মন্ত্রী এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট থাকার কারণেও উনার সমালোচনা করা যায়। কিন্তু আলতাফ মাহামুদের মিথ্যাবাদী মেয়ে যে মিথ্যা কথা লিখছে এবং এরশাদকে বাঁচাতে গিয়ে মউদুদ সাহেবকে ফাঁসাচ্ছে, সেটা সমর্থন করা যায় না।

মউদুদ সাহেব এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৮৫ সালে। তাহলে উনি ১৯৮২ সালে আলতাফ মাহামুদের পরিবারকে উচ্ছেদ করার জন্য দায়ী হলেন কিভাবে?

আলতাফ মাহামুদের মেয়ে সম্ভবত বলতে চাচ্ছেন না যে ৮২ সালে তাদের বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করা এরশাদ এখন তার প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত এবং উনার সম্ভবত জানা নেই মউদুদ আহমেদ ১৯৬৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আগরতলা মামলা থেকে মুক্তিযুদ্ধে কী ভূমিকা পালন করেছেন। তাহলে চেতনার আড়ালে দাঁড়িয়ে এরশাদকে রক্ষা করার জন্য উনি মউদুদ আহমেদকে দোষী করে এমন ডাহা মিথ্যা কথা লিখতেন না।
ফুটনোট:
দল বদলের জন্য মানুষ এস এ খালেক এবং ব্যারিস্টার মউদুদ আহমেদকে যতটা সমালোচনা করে অন্যদের কিন্তু তেমন সমালোচনা করে না। এই যেমন মাহামুদুর রহমান মান্নার কথাই ধরুন। এই ভদ্রলোক ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু করেছিলেন, তারপর যোগ দিলেন জাসদে, এরপর বাসদে, তারপর আওয়ামী লীগে, শেষে এখন আওয়ামী লীগ ছেড়ে নতুন দল গঠন করেছেন। উনাকে নিয়ে কী এত সমালোচনা হয়? নাকি দল পরিবর্তন করে একটি বিশেষ দলে এলেই তাদের সমালোচনা করতে হবে?

লেখক -ওহিদুজ্জামান (কেন্দ্রীয় বিএনপির জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক) এর ফেসবুক ওয়াল থেকে।

নিচে শাওন মাহমুদ এর লেখাটা দেয়া হল-
গত বৃহস্পতিবার শাওন মাহমুদ ফেসবুক পেজে তার বক্তব্যে জানান, ১৯৮২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের দেওয়া বাড়ি থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হয়। আর সেটাও করা হয় এক দিনের নোটিসে।

বাড়ির সামনে দাঁড়ানো মওদুদের ছবিটির কথা উল্লেখ করে শাওন মাহমুদ তার ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘অনেক শরীর খারাপেও এই ছবিটা আমাকে সকাল সকাল সোজা করে দাঁড়িয়ে দিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শহীদ পরিবারদের বেশ কিছু বাড়ি নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে উপহার দিয়েছিলেন। তার মধ্যে আমাদের বাড়িটি ছিল ১নং মালিবাগ।’ ‘৮২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক দিনের নোটিসে সে বাড়িটি থেকে আমাদের উচ্ছেদ করা হয়। একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে সুটকেসের ওপর মা বসিয়ে রেখেছিলেন আমায়। বসে বসে পুলিশের তান্ডব দেখেছিলাম সেদিন। দোতলা থেকে বাবার ব্যাগ ফেলছিল ওরা। এলপি রেকর্ডগুলা চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলছিল বারান্দা থেকে। নিচের তলার সংগীত স্কুলের হারমোনিয়াম, তবলা, তানপুরা উঠোনের এখানে-ওখানে ছুড়ে ছুড়ে ফেলছিল ওরা। আমি জানতাম না রাতে কোথায় থাকব সেদিন’-লেখেন শাওন।

শহীদ বুদ্ধিজীবীর কন্যা লেখেন, ‘সেই উচ্ছেদ প্রকল্পের প্রধান উদ্যোক্তা মওদুদকে সুট পরে মাধবীলতা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে তার উচ্ছেদ হওয়া বাসার সামনে বলতে শুনলাম যে, তিনি (মওদুদ) ফুটপাতে থাকবেন। হা হা হা মওদুদ সাহেব, ৮২ সালের উচ্ছেদ ভুলি নাই। ভুলব না। ইটটি মারিলে পাটকেলটি খাইতে হয়। ওহ্ আরেকটা কথা, সেদিন আমরা যদিও জানতাম না কোথায় থাকব, তার পরও ফুটপাতে থাকবার কথা ভাবিনি। প্রতিবেশীর খালি বাসাটা তাৎক্ষণিক ভাড়া নিয়ে নিয়েছিলাম আমরা।’ ‘আমি একশো বছর বাঁচবো। হিসাব নিয়ে তারপর যাব!’ শেষে লেখেন শাওন মাহমুদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!