ঘাটাইলে ভোগান্তিতে ক্ষুদ্র বিদ্যুৎ গ্রাহকরা।

 

 

 

 

এম.এস.এস.সৌরভ, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা আর অবৈধ সংযোগে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ঘাটাইলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। ঘাটাইল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলি সুরেশ চন্দ্র পাল ও সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার যোগসাজস করে বিদ্যুৎ লাইন নির্মানের নামে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা । বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, নলমা ফিডারের আওতায় কুশিআটা থেকে কড়বাড়ি হয়ে রসুলপুর ইউনিয়নের ঘোড়ারটিকি বাজার পর্যন্ত জনসাধারনের টাকায় একটি এসটি লাইন নির্মাণ করা হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী পিডিবির ডগ তার ও এসটি খুটি ব্যবহারের কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে ডি-১২ (চিকন) তার ও পল্লী বিদ্যুতের খুটি । এতে করে লাইনটি চরম ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। গত ১৬/০৬/১৭ তারিখে ঘোড়ারটিকি বাজারে গিয়ে দেখা যায় শতাধিক ক্ষুব্দ নারী পুরুষ আবাল বৃদ্ধ বনিতা এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় বিক্ষোব্দ হয়ে উঠেছে। তাদের যেন অভিযোগের অন্ত নেই। ঐ এলাকায় বিদ্যুত গ্রাহক ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি শাজাহান মিয়া জানান, ঘোড়ারটিকি, সাপটারবাইদ, পাঞ্জারবাইদ, প্রভূতি এলাকায় বিদ্যুত গ্রাহক রয়েছে ১ হাজারের বেশি।
এ লাইন নির্মাণের শুরুতেই প্রতি গ্রাহককে ২৮ হাজার টাকা করে জমা দিতে হয়েছে তার খুটি ও মিটারের জন্য। এতে প্রায় পৌনে ৩ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে ঠিকাদার ও নির্বাহী প্রকৌশলী সুরেশ চন্দ্র পালকে। আর ৬টা ট্রান্সফরমারের জন্য দেওয়া হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে তিন কোটি টাকা দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। নি¤œ মানের তার ও খুটি দিয়ে এ লাইনটি নির্মাণ করা হলেও প্রকল্প চলাকালীন সময়ে ৬ লাখ টাকা নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী এ লাইনটি অনুমোদন দেন বলে অভিযোগ করেন। ঘোড়ারটিকি গ্রামের বিদ্যুত গ্রাহক ও আওয়ামীলীগ নেতা ইদ্রিস আলী জানান, একেতো রমজান মাস। গত এক সপ্তাহ ধরে এলাকায় বিদ্যুত নেই। বিদ্যুত না থাকায় ভেপসা গরমে অসহনীয় অবস্থায় তারাবী নামাজ আদায় করতে হচ্ছে।
এ নিয়ে ঘাটাইল বিদ্যুত অফিসে বারবার গিয়েও নির্বাহী প্রকৌশলীকে পাইনি। অফিসের করপোরেট মোবাইলে ফোন করলেও রিসিভ করেননি। অবশেষে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকার ভুক্তিভোগী ৫শতাধিক বিদ্যুত গ্রাহক স্বাক্ষর দিয়ে অভিযোগ পত্র দেয়া হয়েছে বলেও জানান। তিনি আরও বলেন এতেও কোন কাজ হচ্ছে না। এদিকে বিদ্যুত না থাকলেও ভৌতিক বিদ্যুত বিলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে গ্রাহকরা। বিদ্যুত গ্রাহক রহিমা বেগম (হি: নং- ২২২২৪) জানান তিনি দুটি ভাল্ব জালিয়ে মে মাসে বিদ্যুত বিল দিয়েছে ২১৯৩ টাকা।
আলেয়া খাতুন নামে (হি: নং-এ/২৪৬৮৮) এক বিদ্যুত গ্রাহকে ডিসেম্বর হতে মার্চ মাস পর্যন্ত বিল দিতে হয়েছে ১০,৫১৯ টাকা। আব্দুল সিদ্দিকী (হি: নং-এ/২২৩০০) বলেন গত এপ্রিল মাসে তাকে বিল পরিশোধ করতে হয়েছে ৪,৩১৫ টাকা। লিয়াকত সিকদার (হি: নং ২৫৩৩৫) নামের আরেক গ্রাহককে মার্চ মাসে বিদ্যুত বিল দিতে হয়েছে ৬,২৩৭টাকা। এছাড়াও লেংড়া বাজার থেকে সাতকুয়া নয়নচালা ও মালেংকা পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুতের খুটি দিয়ে অবৈধ ভাবে আরও একটি অনুমোদন বিহীন লাইন নির্মান করা হয়েছে।
একই ভাবে মুলবাড়ী বড়চালা থেকে ফকির চালা পর্যন্ত একটি লাইনে অবৈধ ভাবে ট্রান্সফরমার বসানো হয়েছে। যেখান থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। এভাবে বানিয়াপাড়া থেকে জামালপুর, আন্দিপুর পর্যন্ত একটি লাইনে বেশ কয়েকটি অনুমোদন বিহীন ট্রান্সফরমার বসিয়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এদিকে নির্বাহী প্রকৌশলীকে খুশি রেখে ব্রাহ্মনশাসন হাই স্কুলের পাশে মাসুদ মিয়ার (মিটার নং ২০৫৫০৮) নামে একটি লাইন অবৈধ ভাবে চালানোর অভিযোগ রয়েছে। অপর দিকে নলমা বাজারে পশ্চিমপাশে আব্দুল সাত্তারের একটি অগভীর নলকুপে অবৈধ ভাবে সংযোগ দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এভাবে কদম তলী ফিডারের আওয়তায় জনসাধারণের টাকায় পল্লী বিদ্যুতের এডজাষ্টিং তারের সাথে সংযুক্ত করে সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে আরও একটি লাইন নির্মাণ করা হয়েছে বলেও সূত্র জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ নির্বাহী প্রকৌশলী যোগদানের পর থেকে অনিয়ম আর দুর্নীতি বেড়েছে। তার স্বেচ্ছাচারিতায় ঘাটাইলের বিদ্যুত ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সুত্র জানিয়েছে। এদিকে ঘাটাইলে নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুতের দাবীতে জুমার নামাজের পর মুসুল্লিসহ এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছে। এর আগে বিক্ষুব্দ বিদ্যুত গ্রাহকদের হাতে নির্বাহী প্রকৌশলী সুরেশ চন্দ্র পাল লাঞ্চিত হন।
এ বিষয়ে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ গত সোমবার তার দপ্তরে গিয়ে তাকে না পেয়ে মোবাইলে (০১৭৫৫-৫৮১৩৯০) যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে রিং বাজলেও রিসিভ করেননি। এ ব্যপারে টাঙ্গাইলে পিডিভির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নজরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘাটাইলে বিদ্যুত লাইন নির্মাণে কিছুটা অনিয়ম হয়েছে এ রকম অভিযোগ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় নতুন করে কাজ করা হচ্ছে। ঘাটাইলে সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত হতে আরও ৬ মাস সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

  • কাগজটুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!