রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে দেশ ছাড়লেন শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ

অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পেয়েছেন। কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে গত রোববার তাঁর সাজা মওকুফ করা হয়। ছাড়া পেয়েই গোপনে দেশ ছেড়েছেন তিনি।

কারা সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের জুন মাসে জোসেফের মা রেনুজা বেগম ছেলের সাজা মওকুফের জন্য আবেদন করেন। আইন মন্ত্রণালয় সাজা মওকুফের পক্ষে মতামত দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও ইতিবাচক মতামত পাঠানো হয়। এরপর প্রায় দুই বছর বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা শোনা যায়নি। জোসেফ দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তাঁকে ক্ষমা করার বিষয়টি জানাজানি হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, কারাবিধির ৫৬৯ ধারা অনুসারে কোনো বন্দী তাঁর সাজার মেয়াদের দুই-তৃতীয়াংশ খাটলে সেই বন্দীর বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ না থাকে, তবে সরকার চাইলে বিশেষ সুবিধায় তাঁকে মুক্তি দিতে পারে। সে অনুযায়ী জোসেফের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি তাঁর সাজা মওকুফ করে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছেন। এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে জোসেফ মালয়েশিয়ায় গেছেন।

জোসেফকে কেন মুক্তি দেওয়া হলো, তা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নিয়মনীতি মেনেই তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। চার দিন আগে তাঁর সাজা মওকুফের পরই তিনি বিদেশে গেছেন। জোসেফ ২০ বছর সাজা খেটেছেন।

অবশ্য কোনো জটিল রোগ ছাড়াই ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ৮ মে পর্যন্ত টানা ২০ মাস কারাগারে না থেকে হাসপাতালে ছিলেন জোসেফ।

১৯৯৬ সালের ৭ মে মোহাম্মদপুরে ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানকে গুলি করে হত্যার দায়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফকে ১৯৯৯ সালে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।
এ রায়ের বিরুদ্ধে জোসেফ আপিল করলেও মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। পরে আপিল বিভাগ এ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন এই তোফায়েল আহমেদ জোসেফ। অভিজাত পরিবারের সন্তান জোসেফের বড় ভাই মেজর জেনারেল আজিজ আহমদ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সাবেক মহাপরিচালক। তাদের বাবা বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ওয়াদুদ আহমেদ। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট জোসেফ বড় ভাই হারিস আহমেদের হাত ধরে রাজনীতির মাঠে পদার্পণ করেন।

নব্বইয়ের দশকে জাতীয় পার্টি ছেড়ে হারিস যোগ দিয়েছিলেন যুবলীগে। তৎকালীন ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও হয়েছিলেন তিনি। জোসেফ তার বড় ভাইয়ের ক্যাডার বাহিনীর প্রধানের দায়িত্বপালন করেন।

এরপর থেকে মোহাম্মদপুর-হাজারীবাগসহ আশপাশের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন জোসেফ। যোগ দেন আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আলোচিত সেভেন স্টার গ্রুপে। পুরো রাজধানী তখন সেভেন স্টার গ্রুপ ও ফাইভ স্টার গ্রুপ নামে দুটি বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করত। এভাবেই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় নাম উঠে আসে জোসেফের।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের চিকিৎসক বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, জোসেফ চিকিৎসার জন্য কারাগারের বাইরে হাসপাতালে ছিলেন। যেহেতু তাঁর সাজা মওকুফ হয়েছে, সেহেতু আর কারাগারে আসার দরকার হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!