বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক সাযযাদ কাদির ইন্তেকাল করেছেন

 

সম্পাদকীয় ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক সাযযাদ কাদির। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।

বৃহস্পতিবার বাদ আসর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাযযাদ কাদিরের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন সংস্কৃতি সচিব ইব্রাহীম হোসেন খান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ ও তারিক সুজাত, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক মনিরুজ্জামান, বাংলা একাডেমির উপপরিচালক আমিনুর রহমান সুলতান, শিশু একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন।

এছাড়া সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজি ও দিলারা হাফিজসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন সাযযাদ কাদিরের স্মৃতিচারণ করেন।

কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, সাযযাদ কাদির জাতীয় পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক ছিলেন ও বর্তমানে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। অভিভাবকের মতো আমাদের আগলে রাখতেন। একজন লেখক ও সাংবাদিক হিসেবে তার যে ভাষাজ্ঞান ছিল, সেটা তুলনামূলকভাবে কম মানুষের মধ্যে দেখা যায়। তার মৃত্যু বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

সাযযাদ কাদিরের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় প্রেস ক্লাব, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কবিতা পরিষদ, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সাংবাদিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন।

কবি সাযযাদ কাদিরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বাবার সব দেনাপাওনার দায়ভার নিয়ে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান সাযযাদ কাদিরের ছেলে সাদ্দাম কাদির।

জানাজা শেষে কবির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার পৈতৃক নিবাস টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ারে।

সাদ্দাম কাদির জানান, শুক্রবার সকাল ১০ টায় টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে দেলদুয়ারে পারিবারিক কবরস্থানে তার বাবার দাফন সম্পন্ন হবে।

সাযযাদ কাদির ১৯৪৭ সালের ১৪ এপ্রিল টাঙ্গাইল জেলার মিরের বেতকা গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে গেছেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে টাঙ্গাইল করোটিয়ার সা’দত কলেজে বাংলার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন সাযযাদ কাদির। মাঝখানে বিভিন্ন সময়ে সহকারী সম্পাদক ছিলেন সাপ্তাহিক বিচিত্রা ও দৈনিক সংবাদ-এর, ভাষা-বিশেষজ্ঞ ছিলেন রেডিও পিকিং, চীনের। আমৃত্যু যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন দৈনিক মানবজমিনে। ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস ইনিস্টিটিউটের পরিচালকও।

কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেও সাযযাদ কাদির তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ-গবেষণা, শিশুতোষ, সম্পাদনা, সঙ্কলন, অনুবাদসহ সাহিত্যের বিভিন্ন ধারায়। তার ৬০টির অধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে, যথেচ্ছ ধ্রুপদ (কাব্যগ্রন্থ), চন্দনে মৃগপদচিহ্ন (গল্পগ্রন্থ), লাভ স্টোরি (অনুবাদ), রাজরূপসী, প্রেমপাঁচালী, হারেমের কাহিনী, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবন্ধসমগ্র (সংকলন), বেগম রোকেয়া প্রবন্ধসমগ্র (সংকলন), পৃথিবীর প্রিয় প্রণয়ী, অপর বেলায় (উপন্যাস), অন্তর্জাল (উপন্যাস), রবীন্দ্রনাথ: শান্তি নিকেতন (গবেষণা), রবীন্দ্রনাথ: মানুষটি (গবেষণা), নারীঘটিত (প্রবন্ধ), খেই (উপন্যাস), বৃষ্টিবিলীন (কাব্যগ্রন্থ)।

সাহিত্যিক হিসেবে তিনি জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গের নাথ সাহিত্য ও কৃষ্টি কেন্দ্রিক সাহিত্য-পত্রিকার শৈবভারতী পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, এম নুরুল কাদের পুরস্কার, ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাব পদক, ভাষাসৈনিক শামসুল হক পদক, পশ্চিমবঙ্গের কবি বিষ্ণু দে পুরস্কার, টাঙ্গাইল জেলা যুব সমিতি গুনীজন পদক, টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদ পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!