২৭ রজব প্রাণের উন্মেষ যেখানে যেভাবে

২৭ রজব প্রাণের উন্মেষ যেখানে যেভাবে
আওলাদ হোসেন

পৃথিবীতে মানুষের জন্ম গ্রহনের মূল কারণই হচ্ছে আল্লাহ্কে দেখতে পাওয়া। আমরা আল্লাহকে দেখতে পাইনা কারণ আল্লাহ্ যা আমরা তা না, আমরা যা আল্লাহ্ তা নন। এই কথাটি বুঝতে হলে অনেক সাধনার প্রয়োজন। আল্লাহ্ গায়েব বা অদৃশ্য, মানুষ দৃশ্যমান। এই দুই এর মিলন হবে মৃত্যুর পর। কিন্তু জায়গাটি কেমন হবে, আমরা কেমন হব ইত্যাদি রাসুলে পাক (দঃ) এই দিনে স্বচক্ষে সব ঘুরে ঘুরে দেখে এসেছেন অথচ আল্লাহ্কে দেখেননি। অর্থাৎ একটি অপরটিতে কনভার্ট হয়নি। যার যার স্থানে অবস্থিত ছিলেন এবং মেরাজের ঘটনার পর রাসুলে পাক (দঃ) বলেননি। বিগত রাতে তিনি আল্লাহ্ কে দেখে এসেছেন।

আল- কুরআনের আয়াতে বলা হয়েছে- বণী ইসরাইল

১। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে- সূরা তাহা/নজম-২
কবে কনভার্ট হবে- কিয়ামত-৩ প্রতি বৎসর এই দিনটি এই সময়ে স্মরণ করি। ধরেই নেই রাসুল (দঃ) আল্লাহর দিদার লাভ করে ছিলেন, আমরা তা বুঝতে পারি নি। মানুষ সৃষ্টি স্রষ্টার অপূর্ব একটি পরিকল্পনা যা কোন মতবাদ দিয়ে প্রকৃত জ্ঞান উদ্ধার করা সম্ভব না। শ্বাস প্রশ্বাস প্রতিনিয়ত চলছে এক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ থাকছে না। রক্ত চলাচল পরিশোধিত রক্ত হার্ট এর এক চেম্বার দিয়ে ঢুকছে অপর চেম্বার দিয়ে সমস্ত দেহে ছড়িয়ে পড়ছে। অন্য দিকে এক চেম্বার দিয়ে অপরিশোধিত রক্ত হার্টে প্রবশে করে এবং অন্য চেম্বার দিয়ে পরিশোধনের জন্য ফুসফুসে প্রবেশ করে। তবে এই প্রক্রিয়ার জন্য পাকস্থলীতে খাদ্য প্রবেশ করার পর ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্র পার হয়ে শক্ত বর্জ হিসেবে পায়খানার রাস্তা দিয়ে বেড়িয়ে যায়। অপর দিকে তরল পদার্থ কিডনীর মাধ্যমে রক্ত পরিশোধিত হয় এবং অবশিষ্ট বর্জ আকারে ব্লাডার, ইউরেটার ইত্যাদির মাধ্যমে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে বেড়িয়ে যায়। এটা স্রষ্টার কাজ এখানে মানুষের কোন হাত নেই। দেহের প্রতিটি অঙ্গ প্রতঙ্গ কত যে বিচিত্র মোটা বইয়ের মাধ্যমে এনাটমি পড়তে গেলে বুঝা যায়। আর শুক্র বিন্দু থেকে মানুষ সৃষ্টি বিভিন্ন ভাবে আল কুরআনে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যা বিজ্ঞান এক চুলও এদিক ওদিক নেই। তারপরও মানুষ ঝগড়া বিবাদ মনগড়া মতবাদ দিয়ে মুসলমানকে বিভ্রান্ত করছে এবং নাস্তিক বানানোর চালাকি কৌশল ফেরকা ফাসাদ দিয়ে দোজখের আগুনের রাস্তা পরিস্কার করছে লোভনীয় আবিস্কারের মাধ্যমে, কিন্তু এত সমস্ত জিনিস একই নিয়মে চলছে, হঠাৎ কিছু হয় নাই তা যে আস্তিকতা তার কোন খবর নেই। তা গোপন বা সাপ্রেষ্ট করা হচ্ছে। ইহকালে মানুষ, পৃথিবী, বিশ্ব ব্রহ্মান্ড যদি এত সুক্ষ ও ব্যাপক হয় তবে পরকালের বাসস্থানটি যদি ইহকালের তুলনায় শত সহস্রগুণে উন্নত হয় জীবন যদি অনন্ত কাল হয়, তা হলে তা কেমন হবে, যৌবন হবে উরুবান আতরাবান, হুরদের উপস্থিত রাখা হয়েছে মানুষের সেবার জন্য, দেহটি তখন আর রক্ত মাংসে গড়ার মতো ভঙ্গুঁর এবং Flexible নিশ্চই হবে না, সেখানে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে যা চিরস্থায়ী এবং যখন যা চাইবে তাই পাবে, প্রশ্ন আসবে কোথা থেকে উত্তর হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর যোগান দাতা যিনি তিনিই তখনও যোগান দাতাই হবেন। এটা গায়েবে বিশ্বাস প্রমাণ করে দেখানো যাবে না, তারপরও রাসুলে পাক (দঃ) মেরাজে স্বচক্ষে সবই দেখে এসেছেন হতে পারে তা প্রকাশ্য ও গোপনীয় বিষয় যা শরিয়ত ও মারেফত। মারেফত অর্থাৎ রূহের জগৎ যা আল্লাহর আদেশ ঘটিত কিন্তু দেহ সেটি কেমন হবে, বংশ বিস্তারের বিষয়টি নিশ্চই থাকবেনা, থাকবে শুধূ নির্মল আনন্দ ধারা যার নমুনা শুধু পৃথিবীতে দেয়া হয়েছে। এটা চিন্তার বিষয় ভাবিয়ে তুলে কিন্তু চিন্তাশক্তির যে লিমিট তা পার করার ক্ষমতা না থাকায় আমি বিশ্বাস করি না বলে পার পাওয়া বা রক্ষা করার জন্য এখানে নিজেকে রূহের শক্তি দিয়ে বাঁচানো পীর, ফকির দরবেশদের তরিকা হতে পারে কিন্তু রাষ্ট্রের জন্য, আত্মরক্ষার জন্য রাসুলে পাক(দঃ) এর তরিকা বাদ দিয়ে নিজেকে পরজীবী পরগাছা বানানোর সহজ উপায় হচ্ছে বিধর্মীদের হাতে নিগৃহীত হওয়া ও খাস গোলামে পরিনত হওয়া। বাস্তব দিয়েই মোকাবিলা করতে হবে -এটা ফরজ। মাটির মানুষ মাটিতেই ফিরে এলেন রূহের জগৎ থেকে আদিরূপে, পিছনে পড়ে রইলো ঊর্ধ্বাকাশের বিরাট ইতিহাস। ১. তিনি পবিত্র ও মহিমাময় যিনি স্বীয়বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত যার চতুস্পাশর্কে আমি বরকতময় করেছি যাতে আমি তাকে দেখাই আমার কুদরতের কিছু নিদর্শন নিশ্চই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। ১ঃ১ঃ১৭

২. তখন আল্লাহ্ স্বীয় বান্দার প্রতি ওহী করার ছিল, তা ওহী করলেন। যা তিনি দেখেছে তার অন্ত:করণ তা অস্বীকার করেনি, তবে কি তোমরা তার সাথে, তিনি যা দেখেছেন সে বিষয়ে ঝগড়া করছ? তিনি তো উক্ত ফেরেশতাকে আরও একবার দেখেছেন সিদরাতুল মুনতাহার সন্নিকটে । যার কাছেই অবস্থিত জান্নাতুল মাওয়া । যখন সিদরাতুল মুনতাহাকে আচ্ছাদিত করেছিল, যা আচ্ছাদিত করার ছিল, তখন তার দৃষ্টি বিভ্রমও হয়নি এবং তিনি সীমালঙ্ঘনও করেননি। তিনি তো রবের মহান নির্দশন সমূহ দর্শন করেছেন (সূরা নাজম আয়াত ১০ থেকে ১৮ পর্যন্ত এবং পবিত্র হাদিসে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া আছে)।

৩. সে প্রশ্ন করে: কেয়ামত দিবস কবে আসবে? অতএব যখন চক্ষু বিস্ফারিত হয়ে যাবে এবং চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে পড়বে, আর একত্র করা হবে সূর্য ও চন্দ্রকে, (সূরা – কিয়ামা ৬-৯ পর্যন্ত আয়াত)। কবে কনভার্ট হবে তার বিবরণ মানুষও স্রষ্টা একই সমতলে অবস্থান করবে যা বিচারের দিন এবং তারপর ও দেখার ভাগ্য সবার হবে না। অর্থাৎ সেদিন রূহ ও ফেরেশতারা সাবিদ্ধভাবে দাড়াবে। দয়াময় আল্লাহ পাক অনুমতি দেবেন সে ছাড়া অন্য কেউ কথা বলতে পাড়বে না এবং সে সঠিকজ কথা বলবে (৭৯,৩৭-৩৮)।

কনভার্ট হওয়ার একটি নমূনা দেয়া হল। আল কুরআনে এ সমন্ধে আরও অনেক আয়াত আছে। পবিত্র হাদিসে বিস্তারিত বিবরণ আছে । মানুষ কেমন দেহ ও আত্মা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা জানা যাবেনা, অনুমান করা ও ঠিক হবে না। কারন তুমি এমন কোন ও বিষয়ের পেছনে পড় না যার জ্ঞান তোমাদের নেই (১৭:৩৬)।

পৃথিবীতে প্রানের সঞ্চার যে কতটা বিষ্ময়কর তা বুঝানো সম্ভব নয়। তবে নমুনা হিসেবে কিছুদিন বেঁচে থাকার পর মৃত্যুবরণ করা তারপর যেকোন সময় পুনরায় পুনরাবির্ভাব হওয়া অত্যাশ্চর্য এবং তখন হয়তো বিশ্বের বিষ্ময় বলে থাকবে না। প্রানের সঞ্চার কেন কিভাবে হয়েছিল তার উত্তর অবশ্যই পাওয়া যাবে। অথচ, The process is very hard মৃত্যু হচ্ছে প্রথম শর্ত ও সোপান। প্রান, আত্মা, রূহ নফস ইত্যাদি শব্দ বিশ্বাস অবিশ্বাসের কোন শর্ত থাকবে না- স্রষ্টাকে পাওয়া যাতে যা জীবনের একমাত্র উৎস সেখানেই সমাপ্তি । আমরা সবাই সেই পথেরই যাত্রী যদিও আমরা ভুলে গেছি, ভুলানো হয়েছে আর ভুলের মাশুল দেয়া হবেই অচিন্তনীয় এবং ভাড়ী বোঝা যা একের বোঝা অন্যে বহন করবে না আল কুরআনের অনেক আয়াতে উল্লেখ আছে । কিন্তু তা মানেনা আর প্রতিবৎসর এই কথাািট স্মরন করিয়ে দেয়ার জন্য কলাম লিখে থাকি। তারপরও আল্লাহকে দেখার বিষয়টি রয়েই গেল । মূসা (আঃ) আয়াত ১৪৩ সূরা ২০ এ বলা হয়েছে- ইন্নি আনাল্লাহা আমিই আল্লাহ্ । সূরা ২৮, আয়াত ৩০- হে মূসা। আমিই আল্লাহ্ জগৎ সমূহের প্রতিপালক । কথা হলো কিন্তু দেখা হলো না পাহাড়ের উপর জ্যোতির বিকাশ ঘটলে পাহাড় চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে গেল- নূরূন আ’লানূর। সেই উর্ধ্বাকাশের খবর অজানা অচেনা হয়ে থাকত যদি রাসুল (দঃ) নিশিথে নভো: ভ্রমণ না করতেন আর প্রানের সঞ্চার কথাটি প্রকাশ্যে দেখে না আসতেন। প্রানের উদ্ভব থেকে প্রানের বিস্তার বিজ্ঞানের বিষয় নয়- গায়েব বিশ্বাসের উপর আর গায়েব কেমন কোথায় কি ইত্যাদি দেখে এলেন। বিরাট একটি বিষয়ের সমাধান হয়ে গেলো। Practical demonstration হয়ে গেলো। কাজেই এর গূরুত্ব অনেক, রাত্রিটি পবিত্র ও মহিমান্বিত । আমাদের অনিশ্চয়তার অন্ধকার থেকে বেড়িয়ে আমরা পবিত্র জ্ঞানের অধিকারী হই। পৃথিবীতে যেমন Auto machine বসানো হয়েছে, পরকালে সেই Auto কল্পনাতীত অনন্তের মধ্যে ঘুরে বেড়াবে, সীমাবদ্ধতা উঠে যাবে, আল্লাহকে দেখা যাবে যা নৈকট্যের অন্যতম অন্যতম একটি পথ যা পৃথিবীতে অর্জনের বিষয়। মেরাজ বারে বারে আসে আর আমাদের মনকে উর্ধ্বমূখী করে দেয়। আমরা আর অরক্ষিত ও অস্তিত্বহীন থাকি না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!