কেকা ফেরদৌসি কে এক নজরে জেনে নিন। ট্রলের উপাদান হল কেন?

সেলিনা জাহান প্রিয়া

কেকা ফেরদৌসীর জন্ম ৪ আগস্ট ১৯৬০ সালে, ঢাকায়। বাবা মরহুম ফজলুল হক ছিলেন চলচ্চিত্র সংবাদিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক। মা কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন। স্বামী ইমপ্রেস গ্রুপের পরিচালক ও শিল্পপতি আব্দুল মুকিত মজুমদার (বাবু)। দুই সন্তান সোনালীও আকাশ। ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করে এর থেকে বেশি কিছুই জানা যায়নি।

রান্না নিয়ে উনার আগ্রহ বিয়ের পর থেকে মূলত। ১৯৮০ সাথে বিয়ের পর স্বামীর সাথে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুবাদে বিভিন্ন বিদেশীয় রান্নার সংস্পর্শে আসা এবং রান্নার প্রতি আগ্রহের সৃষ্টি। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে সাঈখ সিরাজের “মাটি ও মানুষ ” অনুষ্ঠানে প্রথম মশরুম রান্না করে। এই পর থেকে বিভিন্ন টিভিতে রান্না অনুষ্ঠান করেন। উনিই যে শুধু রান্নার অনুষ্ঠান করে ব্যাপারটা কিন্তু তা না অারো অনেকে রান্না বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে থাকে যেমন সিদ্দিকা কবির কর্তৃক সিদ্দিকা কবির’স রেসিপি, অালপনা হাবিবের, ‘ট্রিক্স রান্নাঘর অতিথির সাথে অনুষ্ঠান’, শেফ স্পেশাল, “চট জলদি রান্না”, “আজকের রান্না ” নামে আরো বহু অনুষ্ঠান চালু ছিল। কিন্তু কেকা ফেরদৌসর জনপ্রিয়তা শুরু হয় ২০০৬ “দেশ বিদেশের রান্না” নামক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। ঐ অনুষ্ঠানে প্রথম কক্সবাজার ও অাবুধাবিতে ধারণকৃত অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। উনিই প্রথম বাংলাদেশি যিনি রান্নার অনুষ্ঠান করার জন্য দেশের ৫৮ জেলা শহর সহ বিদেশের ৭০টি নামকরা শহর পরিভ্রমণ করেন।

উনার জনপ্রিয়তার আরেকটি কারণ হল, বিভিন্ন দিবস/জনপ্রিয় কোন ব্যক্তির জন্ম/মৃত্যু দিবসে ঐ দিবস বা ব্যক্তির প্রিয় খাবারের রেসিপির অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যেমন টুঙ্গীপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় খাবার নিয়ে একটি বিশেষ পর্ব, কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত শান্তি নিকেতন, কুষ্টিয়ার কুঠিবাড়ি, শাহজাদপুরের কাচারি বাড়িতে ঠাকুর বাড়ির প্রিয় খাবার নিয়ে বিশেষ পর্ব, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে চুরুলিয়ায় কাজী বাড়ির রান্না শীর্ষক বিশেষ পর্ব, মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রিয় খাবার নিয়ে বিশেষ পর্ব এবং ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে একাধিকবার বিশেষ পর্বের রান্না প্রচার করা।

এছাড়া দীর্ঘ রান্নার অভিজ্ঞতার আলোকে লেখেন রান্না বিষয়ক ১৪ টি বই। বই সমূহ হলঃ

১। ডায়াবেটিসের মজাদার রান্না
২। মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না
৩। স্বাস্থ্য সচেতন রান্না
৪। দেশ-বিদেশের রান্না
৫। ঝটপট রান্না
৬। হারানো দিনের রান্না
৭। সোনালি দিনের রান্না
৮। থাই, চাইনিজ ও ভারতীয় রান্না
৯। মজাদার রান্না
১০। ঝটপট আচার
১১। রকমারি নাস্তা ইত্যাদি।

২০১০ সালে ‘শেফ-রেস্ট অব দি ওয়ার্ল্ড’ ‘গুরম্যান্ড কুক বুক অ্যাওয়ার্ডস’ পেয়েছেন। ‘স্বাস্থ্যসচেতন রান্না’ নামক বইয়ের জন্য তাঁকে এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। ঢাকার অনন্যা প্রকাশনী বইটি প্রকাশ করেছে। ১৫৭টি দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লড়ে এই পুরস্কার জিতেছে বাংলা ভাষায় লেখা কেকা ফেরদৌসীর বইটি। ব্রিটেনের ক্যারি অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছি। এছাড়া পান দেশেজ বিভিন্ন পুরষ্কার।

এতসব গুণবিশিষ্ট একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি হঠাৎ করে কেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে চা দোকানেরও আলোচনার বিষয়তে পরিনত হল? এককথায় যদি বলি তা হল, লেবু বেশি চিবলে তিতা হওয়ার মত। প্রথমত উনি নুডুলস নিয়ে এতসব এক্সপেরিমেন্ট (রেসিপি বলতে আমি ব্যক্তিগত ভাবে রাজি না কারণ এই সব কখনও জনমানুষের খাবার হয়ে উঠেনি) করেছে, যেগুলো কোনটাই বাস্তব সম্মত না বা আদৌ এগুলো বাস্তবে খাওয়া উপযোগি কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ব্যক্তি জীবনে উনিই বা কতটা এসব প্রয়োগ করেছে তাও সন্দেহ রয়েছে।

নুডুলস নিয়ে উনার এক্সপেরিমেন্ট গুলো হলো-

১। নুডুসলের শর্মা
২। নুডুসলের বেজিটেবল সুপ
৩। নুডুসলের কোষ্টাড বাংলা ইফতার
৪। নুডুসলের ভর্তা
৫। নুডুসলের আচার
৬। নুডুলসের সাগুদানা বাহারি পায়েস
৭। নুডুলসের টক ঝাল মিষ্টি বল
৮। নুডুলসের ডিম রুল
৯। নুডুলসের সবজি পেয়াজু বাংলা ইফতার
১০। নুডুলসের বেগুন রেসিপি
১১। গিলা কলিজি দিয়ে নুডুলসের চপসি
১২। নারকেল দিয়ে ডেকো নুডুলসের পেঁয়াজু
১৩। খাসির মাংস কারি নুডুলসের
১৪। নুডুলসের পায়েস
১৫। লাউ পাতার ভেতর নুডুল রেসিপি
১৬। নুডুলসের তেহারি প্রভূতি।

বুঝলাম আপনার অনুষ্ঠানের স্পন্সর একটা নুডুলসের কোম্পানি তাই বলে কি সব রান্নার মধ্যে নুডুলস থাকতে হবে, যদি তাই থাকে বা আপনি স্পন্সর কোম্পানির কথামত এই সব উদ্ভবট জিনিস বানান তাতে আপনার নিজস্ব স্বকীয়তা বা ব্যক্তিত্ববোধটুকুই আর রইল কই? শুধুমাত্র স্পন্সর হওয়ার সুবাদে তবে কি তারা আপনার মাথাটাও কেটে নিয়েছে। এভাবে সবাই যদি স্পন্সরের কথামত অনুষ্ঠান করতে থাকে তবে ট্রিক্স ডিশ ওয়াশিং সোপ কর্তৃক স্পন্সরকৃত রান্নার অনুষ্ঠানেও ত দেখা যাবে একসময়ে ট্রিক্স সোপ একটা খাদ্য আইটেম হয়ে দাঁড়াবে। আপনি ব্যক্তিগত ভাবে ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রন করতে পারেন নি বরং স্পন্সরদের সাথে গা ভাসিয়েছেন যার ফলসূত আজ আপনি ট্রলের উপাদান।

পৃথিবীতে হাজার রকম খাবার রয়েছে সবাই কি সব খাবার খায়? খাবার চয়েজেরও একটা ব্যপার থাকে। অনেক সময়ে কোন একটি খাবারের বাহ্যিক চাকচিক্য মানুষকে খাবারটি খেতে আগ্রহী করে তুলে, কখন খাবারের স্বাদ কিংবা কখনও খাবারের পুষ্টিগুণ, যেটা হয়ত যথেষ্ট তিতা। কিন্তু উপরে উল্লেখিত নুডুল’সের মধ্যে কি এমন গুন বা স্বাদ যেটার জন্য মানুষ নুডুল’সের এইসব রেসিপি খেতে আগ্রহী হবে। অনেক রেসিপির নামইত অদ্ভুত শুনলেই মনে ঘেন্না ধরে যেমন নুডুল’সের টক ঝাল মিষ্টি আচার বা নুডুল’সের ভর্তা।

দ্বিতীয়ত আসলে আপনি অনুষ্ঠান সঞ্চালক হিসেবেও ভালো না। কারণ আপনার অনুষ্ঠানে আগত অতিথিবৃন্দকে অনেক সময়ে কথা বলতেও দেয়না ব্যপারখানা কি দৃষ্টিকটু নহে। যদিও অনুষ্ঠানে আপনি হলফ করে বলেন, এইসব খাবার রান্না তারকারা ব্যক্তিজীবন করে এসেছে কিন্তু এগুলো যে শুধু বুলি তা কি এইযুগের দর্শকেরা বুঝে না?

আপনাকে নিয়ে সমাচলোচনার শুরু হবার পর এক সাক্ষাতকারে আপনি বললেন, যাদের কোন কাজ নেই তারাই এইসব ট্রল করছে, এখন আমি যদি বলি আপনারও কোন কাজ নেই বলে এইসব অখাদ্য, কুখাদ্য(বিশেষত নুডুলসের রেসিপি সমূহ) বানিয়ে সময় পার করছেন তবে কি তা শুনতে বেমানান লাগবে?

সমালোচনা একটি কাজের পূর্ণতা লাভে সহয়ক ভূমিকা পালন করে। অনুষ্ঠান চলাকালীন দর্শকদের যেহেতু আপনার রান্না বিষয়ক কোন মন্তব্যের সুযোগ নেই তাই এইসব ট্রলের মাধ্যমে আপনার এক্সপেরিমেন্ট সম্পর্কে তাদের মন্তব্য মাত্র। ব্যপারখানি স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে কিভাবে আরো ভালো আইটেম নিয়ে রান্না করা যায় সে দিকে মনোযোগী দেয়াই কি শ্রেয় নয়। একটা কথা আছে, স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে খড়কুটার মত নির্বিঘ্নে ভেসে বহুদুর যাওয়া যায় কিন্তু দিনশেষে খড়কুটার স্থান ডাস্টবিনেই হয়।

কেকা ফেরদৌসি সম্পর্কে ইন্টানেটে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে খুঁজে পেলাম কেকা ফেরদৌসির আরেক গুণ। উনি পাকিস্তানের প্রথম বাংলা স্বদেশপ্রেমী ফিল্ম “সন অব পাকিস্তান” এ অভিনয় করেন। ছবিটির পরিচালক ছিলেন উনার বাবা প্রয়াত ফজলুল হক এবং রাইটার ছিল উনার মা প্রয়াত কথাসাহিত্যিক বেগম রাবেয়া খাতুন এবং যেটা ১২ আগস্ট ১৯৬৬ পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে রিলিজ হয়। এই ছবিতে আরো অভিনয় করে কেকা ফেরদৌসির ভাই ফরিদুর রেজা সাগর। যিনি বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল টেলিভিশন চ্যানেল আই এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর। চ্যানেলটি ১৯৯৯ সালে একসাথে ৮৯ দেশে সম্প্রচার কার্যক্রমের মাধ্যমে শুরু হয়।


 

 

 

  • কাগজটুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!