খানসামার নারীরা জড়ির কাজ করে সংসারে বাড়তি আয় যোগ করছে

 

 

ভূপেন্দ্র নাথ রায়, দিনাজপুর প্রতিনিধি  । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

দিনাজপুরের খানসামায় নারীরা অবসরে লেহেঙার জড়ির কাজ করে সংসারে বাড়তি আয় করছে। উপজেলার দুবলিয়া গ্রাম ঘুরে এ মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে। ক্লান্ত দূপুরে চাষী যখন ব্যস্ত বিশ্রাম নিতে, ঠিক সে সময় কৃষানী বাড়ীর বাইরের উঠোনে গাছের ছাঁয়ায় বাঁশের টং কিংবা ভাঙ্গা টেবিলে কাপড় বিছিয়ে জড়ির পুঁতি বসাচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষানীর পাশাপাশি তাদের ছোট মেয়েরা কিংবা কোন কৃষানীর স্বামীও এ কাজে তাকে সাহায্য করে যাচ্ছে। খানসামা উপজেলার নারীরা কিছুদিন আগে তাদের স্বামীদের কৃষিকাজে মাঠে-ঘাটে সাহায্য করেছিল। দিনমজুর হিসেবেও কাজ করে সংসারের ঘানি টেনে যাচ্ছিল। উন্নয়নে যে পিছিয়ে ছিল এ বলার অপেক্ষা রাখেনা। কিন্তু আজ খানসামার চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে। গ্রামের নারী-পুরুষেরা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। তাদের পিছন ফিরে তাকানোর ফুরসত নেই। কেউ আবার পার্শ্ববর্তী উত্তরা ইপিজেড, নীলফামারীতে কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। বাকী নারীরা অন্যান্য কাজের পাশাপাশি বাড়ীর কাজের অবসরে লেহেঙায় জড়ির পুঁতি বসাচ্ছেন।
কাজের ফাঁকে কথা হলো অঞ্চলা রানীর সাথে। সে বলল, হামার (আমার) স্বামী জমিত কাম করে আর হামরা (আমি) আন্না-বাড়া করির পর লেহেঙার কাম করি। বাড়িত বসি ডেলি ( দৈনিক) ৭০ থাকি ১৪০ টাকা কামাই করি। যখন কাম থকেনা তখন হামার বাড়িআলা (তার স্বামী) এই কাজত হেলেপ করে। জড়ির কাজ করা কনিকা নামের আরেক নারীর সাথে কথা হলে সে জানায়, মোর বেটি মাঝে মাঝে জড়ি নাগাতে সাহায্য করে। হামরা দুই মা বেটিতে দিনে দুই খান পাটত (দুইটি পার্টে) জড়ি নাগের পারি। দেখা গেল, খানসামা উপজেলার দক্ষিন-পূর্ব শেষ প্রান্তে দুবলিয়ার বাড়াই পাড়ায় কাকুলি, প্রতিমা, শিল্পী,পূর্নিমা, বিথী, শান্তনা, অনিতা, চাম্পা, সবিতাসহ ২৫-৩০ টি পরিবারের নারীরা জড়ির কাজ করে যাচ্ছেন। এ কাজ করে তারা নিজেদের শখের জিনিস পত্র নেওয়ার পর সংসারে বাড়তি আয় যুক্ত করছেন। এও জানা যায়, সৈয়দপুর থেকে মহাজনরা লেহেঙার প্লেইন কাপড় পেন্সিল দিয়ে নকশা করে তাদের বাড়িতে দিয়ে যায়। এরপর তারা ফেভিকল আঠা দিয়ে নকশা অনুসারে বিভিন্ন সাইজের, বিভিন্ন রঙের জড়ির পুঁতি বসান। কাপড়ে পুঁতি বসানো শেষ হলে মহাজন এগুলো নিয়ে যায় এবং আবার নতুন কাপড় দিয়ে যায়। জড়ির কাজে ব্যস্ত থাকা বীথি রানী জানায়, সৈয়দপুর শহরের ভাই ভাই জড়ি হাউসের স্বত্বাধিকারী মো: সিরাজ এবং মমতাজ নামের আর একজন ব্যক্তি তাদের কাপড় সরবরাহ করেন। তারা প্রতিটি পার্ট কাজের জন্য ৭০ টাকা করে দেন। অঞ্চলা রানী জানান, দিনে তারা ১ থেকে ৩ টি কাপড়ে জড়ির পুঁতি বসাতে পারেন। এদিকে সৈয়দপুর গোলাহাটে অবস্থিত ভাই ভাই জড়ি হাউসের প্রোপ্রাইটার মো: সিরাজের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, দুবলিয়া গ্রামের মহিলারা জড়ির পুঁতি খুব সুন্দর- সুক্ষèভাবে বসাতে পারে। এজন্য তাদের কাজগুলো দেওয়া হয়। জড়ি বসানোর পর আমরা এগুলো লেহেঙার পিস হিসেবে পাইকারী কিংবা খুচরা বিক্রি করি।

03



 

 

 

 

 

 

 

  • কাগজটুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!