সেলিনা জাহান প্রিয়ার গল্পঃ- বসন্তের মেঘ।

বসন্তের মেঘ

———– সেলিনা জাহান প্রিয়া

পালকি চরে যাচ্ছে ভাঁটির জমিদারের ছোট স্ত্রী। ভুইয়া বাড়ির মেয়ে সে। হটাত ভাঁটির জমিদার খাঁ সাহেব শিতের সময় চরে পাখি শিকারে আসে। ভুইয়া বাড়ির মেয়ে কে দেখে তার পছন্দ। জমিদারের পছন্দ মানেই তাকে না করা যাবে না। তবে তাকে খাস বাঁদি না করে- বিয়ে করে নিয়ে যায়। ভুইয়ারা জমিদারের কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে পেরে খুবেই গর্বিত। যদি ও ভুইয়া বাড়ির মেয়ে বিন্দুর বয়সের সাথে অনেক পার্থক্য। পালকিতে যাওয়ার সময় বিন্দু কাঁদে নাই। তার কান্না থেমে গিয়েছিল ভুইয়ারা জমিদারের সাথে নতুন সম্পর্কের জন্য নাকি অন্য কারনে তা প্রকাশ পায় নাই। বিয়ের তিন বছর পর্যন্ত জমিদার পত্নী বিন্দু কোন দিন বাপের বাড়ি বেড়াতে আসে নাই। জমিদার তাকে পুতুলের মতো সাজিয়ে রেখেছে। কিন্ত জমিদার সাহেব বাইজি মহল ছাড়তে পারে নাই। একটা মাজার থেকে ফিরছিল জমিদার পত্নী বিন্দু। পথে মধ্য পালকীর পর্দা সরিয়ে দেখে বকুল তলায় গাছের নিচে অনেক মানুষের ভিড়। পালকি থামিয়ে পেয়াদাদের বলল খবর নিতে কি হয়েছে। একজন এসে বলল — মা জননী কোন ভিনদেশী মানুষ। খুবেই অসুখ। জমিদার পত্নী পালকিতে বসেই বলল আমাদের জমিদারিতে কেউ চিকিৎসা ছাড়া মারা যেতে পারে না। তাকে জমিদার বাড়ির দাওয়া খানায় নিয়ে সু-চিকিৎসা দেয়া হউক। আর ভাল না হওয়া পর্যন্ত তার থাকার ব্যবস্থা করা হউক। জমিদার পত্নী তার আদেশ মানেই সেই কাজ। পথিক কে জমিদার বাড়ির চিকিৎসালয়ে নিয়ে আসা হল। কিন্তু মানুষ টার অসুখ ভাল হচ্ছে না। দিন দিন যেন তার জীবন চলে যায় যায় অবস্থা। দাসি বাঁদি খবর নিয়ে এলো মা জননী মনে হয় ভিনদেশী পথিক বাঁচবে না। হাকিম আর কবিরাজ মশায় তার শেষ কোন ইচ্ছা আছে কি না জানতে চাইলে খুব আসতে করে বলল একটু বিন্নি ধানের পায়েস খেতে চায়। জমিদার পত্নী বিন্দু বলল আমি নিজের হাতেই তাকে রান্না করে বিন্নি ধানের চালের পায়েস খাওয়াতে চাই। নিজেই রান্না করে ভিন দেশি পথিকের জন্য পায়েস নিয়ে গেল। পথিক দূর থেকে এক বার দেখল যেন সাদা পরী অনেক দাসীবাঁদীর সাথে হেঁটে আসছে। সবাই জমিদার পত্নী কে দেখে সালাম দিয়ে সরে দাঁড়ালো। কিন্তু এই অল্প সময়ে জীবন প্রদিপ নিভে যায় পথিকের। জমিদারের পত্নীর হাত থেকে পায়েসের বাটি পড়ে যায়। হাকিম পথিকের চোখ বন্ধ করে দেয়। জমিদার পত্নী বিন্দু চাকর বাকর কে ডেকে বলে এই ভিনদেশী পথিকের বাড়ি আমার গ্রামের পাশে তালুকদার বাড়িতে। সেই খানেই পাঠিয়ে দাও খুব যত্ন করে। মাটীতে পায়েসের বাটি পড়ে থাকে। পথিকের লাশ গরুর গারি করে তালুকদার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। সন্ধ্যায় তালুকদার বাড়িতে তালুকদারের ছোট ছেলের লাশ আসে। তালুকদারের ছোট ছেলে যে মারা গেছে তার নাম মোহন। ভুইয়া বাড়িতে তালুকদারের ছোট ছেলের মরার খবর আসাতে, ভুইয়া বাড়িতে আনন্দের বন্যা বইতে থাকে। বন্দুক দিয়ে গুলি ফুটিয়ে বিগল বাজিয়ে উল্লাস করতে লাগলো। জমিদার পত্নী এই রাতে খুব সুন্দর করে সাজে, চুলের খোঁপায় বেলি ফুলের মালা পড়ে। পায়েসের সেই বাটিটা বাঁদি ধুয়ে রেখেছে তার টেবিলে। সেই বাটিতে কিছু পায়েস নেয়। পায়েসের সাথে নিজেই বিষ মিশায়। আয়নার সামনে গিয়ে বলে মোহন তুমি আমাকে ভুলতে পারলে না। চোখের সামনে ভাসতে থাকে মায়ের হাতের পায়েস নিয়ে লুকিয়ে পুকুর পারে জলে পা ভিজয়ে দুই জনে এক সাথে খেত। ভুইয়ারা জমিদারের প্রিয় হবার জন্য তাদের মেয়ে কে দিয়ে দিতে পারে। তবে আমি কি আমার প্রিয় মানুষের কাছে যেতে পারি না। জমিদার পত্নী বিন্দু সেই সন্ধ্যা রাতেই বিষ মিশানো পায়েস খেয়ে মারা যায়। বিন্দু বিষ খেয়ে খাটে চুপ করে শুয়ে ছিল।

ভোর বেলায় ঘোড়ায় চরে বিন্দুর মৃত্যুর খবর নিয়ে ভুইয়া বাড়িতে এক পেয়াদা আসে। বিন্দুর মা চিৎকার করে বলে সবাই চুপ কেন বন্দুক ফুটাও বিগল বাজাও তোমরা চুপ কেন ????

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!