গাছপাড়ায় পুলিশের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসী হামলা; কেচোঁ খুঁজতে গিয়ে বেড়িয়ে আসছে সাপ!

সৈয়দ আকতারুজ্জামান রুমী, পাবনা প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

ধর্ষণ মামলায় সহযোগিতা করতে গিয়ে সদরের গাছপাড়া বাজারে পুলিশের সামনে আসামীপক্ষের লোকজনের হাতে আব্দুল আলীম নামের এক যুবক মারধরের শিকার। ঘটনা অনুসন্ধান করতে গিয়ে কেচোঁ খুঁজতে সাপ বেড়িয়ে পরার মত ঘটনা ঘটেছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, হত্যা মামলার আসামী আব্দুল আলীম,ধর্ষিতার কোন আত্বীয় – স্বজন কেউ না, ধর্ষিতার পরিবার এর সাথে বা প্রতিবেশী হিসেবে ধর্ষণ মামলায় সহযোগি বলে দাবিদার আহত আব্দুল আলীমের কোন প্রকার যোগসুত্র নেই! এমনকি কথিত ধর্ষণ মামলার স্বাক্ষী তালিকা ভুক্ত কোন স্বাক্ষী ও নন তিনি।

মালিগাছা ইউনিয়নের রুমী খাতুন। ফিরোজের সাথে তার চার বছর ধরে প্রেমের সর্ম্পক। অবিবাহিত ফিরোজের পরিবারস্বামী পরিত্যাক্ত রুমী খাতুন কে মেনে না নেওয়াকে কেন্দ্র করেই যত সব কান্ড।

মালিগাছা ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের নওশের আলী প্রামানিকের মেয়ে রুমী খাতুন । প্রায় ৩ বছর পূর্বে সে তালাক প্রাপ্ত। বাড়িতে একদিন মেয়ের ঘরে ফিরোজের পরকীয়া মিলনে অবস্থান দেখে হৈ চৈ করেন। এক পর্যায়ে রুমী খাতুনের বাবা ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে রুমী খাতুন তার বাবা কে ফিরোজের সাথে বিয়ে না হলে সে আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি জানায়। এমন পরিস্থিতির মাঝে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সম্মুখে ফিরোজ ও রুমী খাতুনকে বিয়ে করার দাবি রাখেন। পরে মালিগাছা ইউপি চেয়ারম্যান এর উপস্থিতিতে এবং উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়। যদিও এ ধর্ষণ মামলায় আসামী করা হয় মালিগাছা ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরীফ কে। এ ছাড়া নিজ জামাতা মালিগাছা ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের পাঞ্জাব প্রাং এর ছেলে ফিরোজ প্রাং কে প্রধান আসামী করেন। যার মামলা নং ৫০, তারিখ গত ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ইং।

সে মামলাটি যে মিথ্যা এবং সাজানো ছিলো তা নিশ্চিত করেন ফিরোজের স্ত্রী রুমী খাতুন। এ ছাড়া রুমীর বাবা ধর্ষণ মামলাটিও নোটারী পাবলিক হলফনামার মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালতকে আপোষ মিমাংসা সম্পাদনার কথা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

মালিগাছা ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরীফ কে ধর্ষিতার সাথে ধর্ষকের বিয়ে কি করে সম্ভব করলেন জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি আসলে ঠিক না; ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই পরকিয়া প্রেম ছিলো। মেয়েটাও তালাক প্রাপ্ত ছিলো। দুজনার গভীর সম্পর্ক থাকার কারণে একই ঘরে দুজন ধরা পড়ে। পরবর্তীতে দুজনার উভয় পরিবারের সম্মতি ও উপস্থিতিতে বিয়ে হয়। মূলত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মেয়ের পরিবারের অজ্ঞতা কে পুজি করে মিথ্যা মামলা দিলেও তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারে। আদালতে হলফনামা দিয়ে মামলা প্রত্যাহার করছেন।

রুমী খাতুন জানান, ফিরোজের সাথে সম্পর্ক তার চার বছরের। এর মধ্যে;ধর্ষণের কোন কিছুই না, প্রেম তো সবাই করে; প্রেম করা তো কোন অন্যায় না। ধর্ষণ মামলাটাই ছিলো সাজানো। তার পরেও যেটাই হোক দুই পরিবার তো মেনে নেওয়ার পরেই আমাদের বিয়ে হয়। উভয় পক্ষ থেকে আমাদের বিয়ে হয়। আব্দুল আলীম যে সন্ত্রাসী হামলার শিকার তাকেও আমরা চিনি না। তিনি আমার ইউনিয়নের কোন বাসিন্দা না অথচ কি করে আমার মামলার সহযোগি বলে অপ প্রচার চালানো হলো কার স্বার্থে।
রুমী খাতুনের বাবা নওশের আলী প্রাং বলেন; ফিরোজের পরিবার বিয়ের প্রস্তাব না দেওয়াতে তিনি মামলার পথ ধরেন। ধর্ষণ মামলা দিয়ে হাসপাতালে মেয়ের ডাক্তারী পরীক্ষা শেষে; মেয়ের আত্মহত্যার হুমকি অপরদিকে প্রতিবেশিদের কথা ভেবে দেখি মেয়ে তো ঘরে রাখার জিনিস না; তাই আমরা উভয় পক্ষ গত ২৩ ডিসেম্বর বিয়ে দিয়েছি। যদিও চেয়ারম্যানের নামে মামলা দিছিলাম না; ওটা আমি বার বার নিষেধ করা সত্বেও ; যদিও বলেছিলাম তখন আপদ বিপদের সাথী তিনি। তার নামে মামলা দেয়ার দরকার নেই। ও নাম বাদ দেন মামলা লেখার সময় ওসি সাহেব কে বলে ছিলাম। তিনিও তার মেয়ে রুমী খাতুনের মতো সাফ জানান, সন্ত্রাসী হামলার শিকার আব্দুল আলীম কে চিনি না।

পাবনা সদর থানার নুরপুর পাঁচ পুকুড় এলাকার দরিদ্র পরিবারের ছেলে আব্দুল আলীম। তিনি মৃত আয়নুল ডাক্তারের ছেলে। তাঁর রাজনৈতিক নেতার ইমেজ ধরে রাখতে গিয়ে পৌরসভার পৈলানপুর টেম্পুস্ট্যান্ড মোড়ে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত এক যুবক হত্যা মামলার আসামী। তিনি বলছেন, হত্যা মামলাটি রাজনৈতিক চক্রান্ত ঘটনার সময় সে ছিলো না। অনুরুপ আব্দুল আলীমের মামলার প্রধান আসামী মালিগাছা ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরীফ এর ছোট ভাই আরিফ (৩৮) এর স্ত্রী আজমিরা খাতুন তার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে দাবি করেন। আজমিরা বলেন, ঘটনার সময় আমার স্বামীসহ আমরা স্ব-পরিবারে ছিলাম না। আমরা ঢাকায় এ দিন গিয়েছিলাম। আমাদের কাছে গাড়ির টোল প্লাজা রশিদ এমনকি বাণিজ্য মেলায় গিয়েছি, এমনকি যে বাড়িতে আমরা ছিলাম সে বাড়ির সিসি টিভি ফুটেজ ও রয়েছে। তাহলে কি করে কেন কার স্বার্থে আমার স্বামীকে প্রধান আসামী করা হলো। এ ছাড়াও তিনি প্রশ্ন রাখেন হত্যা মামলার আসামীকে পুলিশ হাতকড়া না পরিয়ে বরং ধর্ষণ মামলার সহযোগি বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। আজমিরা তার স্বামী আরিফ এর জন্য প্রশাসনের কাছে স্বামীর প্রতি ন্যায় বিচার দাবি করেন।
এ দিকে পুলিশের সামনে আব্দুল আলীম কে মারপিট মামলার প্রধান আসামী আরিফ হোসেনকে গত ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার রাতে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এ নিয়ে এ মামলায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে এ মামলায় আশরাফুল ইসলাম, তোফাজ্জাল হোসেন ও মিরাজ হোসেন নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহম্মেদ জানান,গত ২৫ জানুয়ারি শনিবার দুপুরে আরিফ হোসেনকে পাবনা আমলী আদালত-১ এ হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানী শেষে গ্রেপ্তারকৃত আসামী আরিফকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে এ ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা পুলিশ। আর হামলার ঘটনায় আরিফকে প্রধান আসামীসহ দশজনকে নামীয় ও অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামী করে মামলা করেন আহত আলীমের স্ত্রী রুমা খাতুন।

আহত আব্দুল আলীম ১৩ দিন হাসপাতালে থাকার পর গত ৩১ জানুয়ারী বেলা ১২ টায় পাবনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়ে এ দিন বাড়ি ফিরেছেন। এখনও শরীরে যন্ত্রণা বইতে হচ্ছে। তার স্ত্রী রুমা খাতুনের দায়েরকৃত মামলার অভিযোগ সুত্রে জানাযায়; গত ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় হামলার শিকার হন আব্দুল আলীম। চাঁদার টাকা চেয়ে না পেয়ে তার উপর হামলাকারীা ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালায়। যার সদর থানার মামলা নং ৬৫,তারিখ ২০ জানুয়ারি।

যদিও পুলিশের সামনে আব্দুল আলীম নামের যুবককে মারধরের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে পাবনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খাইরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেছে জেলা পুলিশ।

গত বুধবার পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীমা আখতার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে যুবককে বাঁচাতে ব্যর্থ হওয়ায় দায়িত্বে অবহেলা ও অদক্ষতার অভিযোগে খাইরুলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ব্যপারে তদন্ত কমিটি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বিভাগীয় তদন্ত শেষে পুলিশ হেডকোয়ার্টার পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। এ দিকে স্থানীয়রা বলছেন, মাদক দ্রব্য ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলার পাশাপাশি হত্যা মামলা রয়েছে। এমন দোষে অভিযুক্ত ব্যক্তি কে কি করে ধর্ষণ মামলার সহযোগিতা কারী বলে দাবি সত্যিই রহস্যজনক। পুলিশ প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে সচেষ্ট হবে এবং সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!